ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা - ড্রাগন ফলের অপকারিতা
আপেলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা জানব ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
ড্রাগন ফল বর্তমানে একটি অতি পরিচিত ফল। বর্তমানে ড্রাগন ফল খেতে খুব সুস্বাদু
এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই আপনি যদি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
সম্পর্কে জানতে চান আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।
পোস্ট সূচিপত্রঃকেননা আজকের এ পোস্টটিতে সাদা ড্রাগন ফল এবং লাল ড্রাগন ফল
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফলের গাছ অনেকটা দেখতে ক্যাকটাসের মত। ড্রাগন ফলের গাছে ফুল রাত্রে ফোটে
দিনের বেলা ড্রাগনের ফুল ফোটে না। ড্রাগন ফলের গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলঃ
(Hylocereus cactus) বাংলায় হল হাইলোসেরিয়াস ক্যাকটাস। যেটা হনোলুলু রানী
(Honolulu queen) নামে পরিচিত লাভ করেছে। এ ড্রাগন ফলের গাছ দেখা যেত দক্ষিণ
মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার অঞ্চলে।
তবে আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে এবং আধুনিক যুগে বিশ্বের সব দেশে ড্রাগন ফলের চাষ হয়ে
থাকে। ড্রাগন ফলের মধ্যে সবথেকে বেশি চাষাবাদ হয় যে ফলটি দেখতে উজ্জ্বল লাল ত্বক
ও আঁশযুক্ত এবং সবুজ পাতা রয়েছে। ড্রাগন ফল সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি ফল
দেখতে লাল এবং অন্যটি দেখতে সাদা।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফল একটি ফল হিসেবে বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় লাভ করেছে। এই ফল পুষ্টিগুণ
সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন যুক্ত। এছাড়াও অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা
বৃদ্ধি করতে ড্রাগন ফল প্রাক-বায়োটিক ভাবে কাজ করে। এতে করে অন্ত্রের সুরক্ষা
বৃদ্ধিতে, ক্লোন ক্যান্সার বা পেটে জ্বালাপোড়া হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও ড্রাগন ফলে
ভিটামিন বি থ্রি যেটা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।নিচে ড্রাগন
ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- ড্রাগন ফলে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যেটা হার্টের জন্য খুব প্রয়োজন । এছাড়াও এই ফলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যেটা স্ট্রোকে ঝুঁকি কমায় এবং হার্টকে সুস্থ রাখে।
- আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি এর কোন তুলনা হয় না। তাই আপনি যদি পর্যাপ্ত ভিটামিন সি পেতে চান তাহলে অবশ্যই ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত। এছাড়াও দেহের রক্ত কণিকাকে ভালো রাখতে ড্রাগন ফল সাহায্য করে।
- বর্তমানে আমাদের অনেকেরই হজম সমস্যা সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয় তবে ড্রাগন ফল এ হজম শক্তি ও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুব ভালো কাজ করে কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। আবার রক্তে শর্করার আদর্শ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এই ফল অনেক উপকারী এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটা আদর্শ ফল।
- যারা ডায়েট করেন তাদের জন্য খাবার লিস্টে ড্রাগন ফল খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা ড্রাগন ফল হচ্ছে ফাইবার সমৃদ্ধ এবং ফ্যাট ফ্রি একটি ফল তাই ডায়েটের জন্য ড্রাগন ফল একটি আদর্শ ফল।
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য ড্রাগন ফল একটি আদর্শ ফল । ড্রাগন ফলের ভিটামিন বি ,ফোলেড এবং আইরন পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। ফলে গর্ভবতী মাকে শারীরিকভাবে শক্তি যোগায় এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ঘাটতি অস্বাভাবিকভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও মেয়েদের ডিহাইড্রেশন এড়াতে পারে।
- শরীরের চর্বির পরিমাণ কমাতে কম ক্যালরি উপাদান বেশ এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ড্রাগন ফল খুব ভালো কাজ করে।
- আমাদের শরীর সুস্থতার জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কোন তুলনা হয় না। তাই আপনি যদি এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রাকৃতিক ভাবে পেতে চান তাহলে ডাগন ফলের কোন জুড়ে নেই। কেননা ড্রাগন ফল হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ফল।
- ড্রাগন ফল যেহেতু চর্বি বিহীন এবং ফাইবারযুক্ত ফল । এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন সি যেটা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও শরীরের খারাপ ও ভালো অনুজীবী কার্যকর ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- যাদের অ্যানিমিয়া সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে এর ড্রাগন ফলটি প্রতিদিন খেতে পারে। এছাড়াও ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভালো।
- ক্যান্সারের যদি কমাতে ড্রাগন ফল সহায়তা করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমাতে ড্রাগন ফল খাওয়া যায়। যাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে চান বা ছানি পড়া রোধ করতে চান তারা ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম - ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম হল আপনাকে পাকা ফলটি কিনে এনে সেটাকে ধুয়ে
পরিষ্কার করে নিতে হবে। পাকা ড্রাগন ফল টি অনেকটা উজ্জ্বল লাল রঙের বা গোলাপি
রঙেরও হয়ে থাকে ভালো পাকা ড্রাগন ফলের অনেক বেশি সুস্বাদু হয়। এবার ড্রাগন ফলটি
একটি চাকু দিয়ে কাটতে হবে এবং একটি চামচ ব্যবহার করে ভেতরের অংশগুলো কে বের করে
নিতে হবে যেগুলো লাল রঙের বা গোলাপি রঙ্গে হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
এবার আপনি ডাবল ফলটি খেতে পারেন। এছাড়াও বড় ড্রাগন ফলটি খেয়ে ধুয়ে আপেলের মত
চারভাগ করে নিয়েও খেতে পারেন। ড্রাগন ফল আপনি ফ্রিজে রেখেও খেতে পারেন। যে কোন
ফল খাওয়ার সময় অবশ্যই আপনি খাবার আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টার পূর্বে খাবেন।
লাল ড্রাগন ফলের উপকারিতা - সাদা ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফল যেহেতু লাল ও সাদা দুই ধরনের হয়ে থাকে ফলে অনেকে লাল ড্রাগন ফলের
উপকারিতা সম্পর্কে জানতে অনেক আগ্রহ চলুন তাহলে দুই ফল সম্পর্কে জানি।
লাল ড্রাগন ফল এবং সাদা ড্রাগন ফল এই দুইটি মূলত ড্রাগন ফল যেহেতু এগুলো ড্রাগন
ফল সেহেতু দুইটির পুষ্টি গুনাগুন গতমান একই। একটি জাত সাদা কালারের হয়ে থাকে এবং
অন্যটি জাত লাল কালারের। এ লাল বা সাদা ড্রাগন ফল রয়েছে লোহার উৎস যেটা
রক্তস্বল্পতা নিরাময় হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও রয়েছে উচ্চ মানের ক্যালসিয়াম ও
ফসফরাস যেটা আপনার শরীর ও হাড়ের বিকাশ গঠনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন এ এবং বি দ্বারা সমৃদ্ধ যেটা স্বাভাবিক সিস্টেম ও
দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। এছাড়াও ড্রাগন ফল রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
বর্তমানে আমরা সকলেই জানি প্রত্যেকটি খাবার সেটা পানীয় বা তরল খাবার বা লিকুইড
যাই হোক না কেন প্রত্যেকটি জিনিসেরই দুইটি দিক থাকে একটি হচ্ছে উপকারী দিক অন্যটি
হচ্ছে অপকারী দিক উপকারী দিক বলতে স্বাস্থ্যসম্মত ও অপকারী বলতে স্বাস্থ্যহীনতা
অর্থাৎ যেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরটি তেমনি ড্রাগন ফলেরও যেমন অনেক উপকার
রয়েছে তেমনি রয়েছে অপকার দিক অর্থাৎ অপকারিতা চলুন তাহলে আমরা ড্রাগন ফলের
অপকারিতা সম্পর্কে জানি।
- আপনি যদি ড্রাগন ফল অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে ফেলেন তাহলে ডায়রিয়া জনিত সমস্যা হয় ঢুকতে পারেন।
- এছাড়াও ড্রাগন ফল বেশি খেলে আপনার পেট ব্যথা বা অন্তরের সমস্যাগুলি প্রকাশিত হতে পারে।
- ড্রাগন ফলে রয়েছে ফাইবার তবে আমাদের মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য মোটেও ভালো না তাই পরিমাণ মতো ড্রাগন ফল খাওয়ায় ভালো
- আপনারা যারা পানি কম পান করেন তারা যদি ড্রাগন ফল বেশি খান সেক্ষেত্রে আপনাদের ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি হতে পারে। তাই ফল খাওয়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন।
- আমাদের যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের ক্ষেত্রে দাগন ফল যেমন রক্তচাপ কমায় আবার এই ড্রাগন ফলে পটাশিয়াম রয়েছে তাই চিন্তা ভাবনা করে আমাদেরকে পরিমাণ মতো ফল খাওয়াই ভালো। আপনি যদি অতিরিক্ত হয়ে ফেলেন সে ক্ষেত্রে আপনার হাইপারটেনশন হতে পারে এবং এই হাইপারটেনশনের ফলে বমি বমি ভাব চেতনা হারানো মাথা ঘোরা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
সাধারণ প্রশ্নাবলী(FAQ)
প্রশ্নঃ ড্রাগন ফলে কি কি ভিটামিন থাকে?
উত্তরঃ ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এই ফলে ম্যাগনেসিয়াম
ওমেগা ফ্যাটে এসিড বিটা ক্যালরোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এছাড়াও ফাইবার ও আয়রন
রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী ড্রাগন ফলে কম ক্যালরি থাকায় এটা খেলে
ওজন বৃদ্ধি হয় না ।
প্রশ্নঃ গর্ভ অবস্থায় কি ড্রাগন ফল খাওয়া যায়?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া যায় কেননা এতে ভিটামিন বি সহ আয়রন ও
অন্যান্য উপাদানসমূহ রয়েছে কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
কেননা অনেকের ডায়াবেটিসহ অন্যান্য অসুবিধা থাকতে পারে।
প্রশ্নঃ ড্রাগন ফল খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে?
উত্তরঃ ড্রাগন ফল খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে কিনা তা অনেকে দুশ্চিন্তায় থাকেন কিন্তু
ডায়াবেটিস জন্য ড্রাগন ফল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে আপনাকে পরিমাণ মতো ড্রাগন
ফল খাওয়া উচিত কেননা এতে অল্প পরিমাণ হলেও সুগার রয়েছে ।
প্রশ্নঃ ড্রাগন ফলে কি আয়রন আছে?
উত্তরঃ ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন বি এবং থায়ামিন পরিমাণ অনেক বেশি এছাড়াও
ক্যালসিয়াম প্রোটিন ম্যাগনেসিয়াম ও প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফাইবার যা আমাদের
শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।
শেষ কথাঃড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা জানলাম ড্রাগন ফল সম্পর্কে। কেননা বর্তমানে ড্রাগন ফল
একটি অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় সুস্বাদু ফল। এর ফল অনেক গুণে গুণান্বিত এছাড়াও
ভিটামিন বি-সি পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আয়রন ফাইবার ইত্যাদি উপাদান যুক্ত ফল।
আশা করি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনি ড্রাগন ফল সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পেয়েছেন
আপনার যদি ড্রাগন ফল সম্পর্কে নতুন কোন তথ্য থাকে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে
জানাবেন এবং এরকম আরো অন্যান্য তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করুন।
NETEINFO ওয়েবসাইটে এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন কেননা প্রতি কমেন্টের রিভিউ করা হয়
comment url