সিজারে পর খাওয়ার তালিকা জেনে নিন
ব্রণ মুক্ত ত্বক পাওয়া সহজ টেকনিক জানুনসিজারের পর অনেকে কি খাবে সে বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে । কিন্তু আপনার এই
উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার তাই আপনি যদি ঠান্ডা মাথায় আজকের এই পোস্টটি
পড়েন তাহলে সিজারের পর আপনাকে কোন খাবারগুলো খাওয়া লাগবে সে বিষয়ে আর উদ্বিগ্ন
হতে হবে না। কেননা আজকের পোস্টটি সিজারে পর কোন খাবার গুলো খাওয়া যাবে সেই
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ।
পোস্ট সূচিপত্রঃআপনি যদি একজন সিজারিয়ান পেসেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে জানা উচিত
সিজারের পর কোন খাবারগুলো খেতে হয় তাহলে চলুন আর দেরি না করে সিজারে পরপর
খাবারগুলো খাওয়া যায় সে সম্পর্কে দেখে আসি।
ভূমিকা
সিজারের পর অনেকে শক্ত খাবার গ্রহণ করতে চান আবার অনেকে শক্ত খাবার কে গ্রহণ করা
ক্ষতিকর বলে মনে করেন । তাই সিজারিয়ান অপারেশনের পর কি ধরনের খাবারগুলো গ্রহণ
করা উচিত এবং আপনার কোন খাবার গুলো বর্জন করা উচিত সে সম্পর্কে জানানো হবে।
সিজারের পর যে খাবার গুলো মায়ের থাকা উচিত যাতে করে একজন মায়ের শরীর সুস্থ থাকে
এবং শিশু ভালো বিকাশের সহায়তা করতে পারে ।
সিজারের পরে কেন মায়ের পুষ্টিগুণ প্রয়োজনীয়তা ?
একজন মায়ের সিজার হওয়ার পর তার শরীরে অনেক কিছুর পরিবর্তন করে এবং একজন মায়ের
সুস্থ শরীরের জন্য সুষম খাদ্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় এবং মা যে খাবারগুলো গ্রহণ করবে
। সে খাবার থেকে যেন শিশু তার মায়ের বুকের দুধ যথেষ্ট পরিমাণে পাই সেদিকেও
লক্ষ্য রাখতে হবে । কেননা প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে মায়ের বুকের দুধ শিশুর বিকাশের
পুষ্টিগুণের একমাত্র উৎস ।
একজন মাকে অবশ্যই তার খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত । তার খাবারের সাথে
তার শিশুর শরীরের জন্য সেটা পুষ্টিকর হবে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত। আবার
মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য একজন মায়ের প্রতিদিন কমপক্ষে 500 কিলো ক্যালরি
বাড়তি শক্তি প্রয়োজন রয়েছে ।
সিজারের পর খাবার তালিকা সমূহ
একজন মায়ের সিজার হওয়ার পর তার খাবার তালিকায় এমন খাওয়ার রাখা উচিত যাতে তার
পেটের ক্ষতর উপরে চাপ সৃষ্টি না হয় এবং খাবারগুলো দ্রুত হজম হয়। সিজারিয়ান
মহিলাদের যেসব খাবারে গ্যাস সৃষ্টি করে সেসব খাবার না খাওয়াই ভালো । সিজারের পর
তাদের খাবারের তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলো রাখতে হবে । এখন আমরা সিজারিয়ান
মহিলাদের জন্য একটা আদর্শ খাবার তালিকা প্রকাশ করছি যে খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন , খনিজ , প্রোটিন , ওমেগা থ্রি সহ একজন মায়ের অত্যন্ত আদর্শ
পণ্য খাবার।
ব্রাউন বেড ও ব্রাউন রাইস
সিজার হওয়ার পর একজন মায়ের ব্রাউন রাইস খাওয়া অনেক বেশি উপকার। ব্রাউন রাইসে
রয়েছে ফাইবার পলিফেনাল , পাইটিক অ্যাসি ড যা রক্তে সরকারের মাত্রা ঠিক রাখতে
সাহায্য করে। এছাড়াও যাদের সুগার রয়েছে তাদের সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে এ ব্রাউন
রাইস সাহায্য করে । ব্রাউন বেড ও ব্রাউন রাইসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ থাকে
। এগুলো একজন মায়ের জন্য আদর্শ খাবার এই খাবারগুলো খেলে মায়ের বুকের দুধ উৎপাদন
ও মায়ের শক্তি করতে সাহায্য করে।
গোস্ত বা মাংস
একজন মায়ের সিজার হওয়ার পর শরীরের রক্ত ঘাতি পূরণের জন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবারগুলো
খেতে হয় কেননা এই খাবারগুলো খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোক্ষ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এর
জন্য সিজারের পর একজন মায়েদেরকে তাদের খাবারের তালিকায় মাংস রাখা উচিত কেননা
মাংসতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ও ফাইবার রয়েছে। তবে মাংস খাওয়ার সময় সিজারিয়ান
মহিলাদেরকে সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত কেননা অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে আবার
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে পারে।
পনির
প্রোটিনযুক্ত খাবার সিজারিয়ান মাদের জন্য খুব উপকারী তাই ন প্রোটিনযুক্ত খাবার
খেতে হলে আমাদেরকে পনির খাওয়া প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও পনির খেলে আমাদের শরীরে
নতুনভাবে টিস্যু কোষের বৃদ্ধি ক্ষেত্রে সাহায্য করে এবং শরীরকে তাড়াতাড়ি ফিটনেস
ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এছাড়াও প্রোটিন শরীরের ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে যেটাতে শরীরের
হার ও দাঁত কে শক্তিশালী গড়ে তোলে। তাই প্রত্যেক সিজারিয়ান মাদের কে পরিমাণ মতো
পনির খাওয়া প্রয়োজন।
আঙ্গুর ও তরমুজ
আমাদের শরীরকে ফিট রাখতে হলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যুক্ত খাবার গুলো গ্রহণ করা
উচিত। তেমনি দুইটি ফল যেগুলো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এর উৎস থাকে সেটা হল
আঙ্গুর ও তরমুজ। সিজারিয়ান মাদের জন্য এই আঙ্গুল ও তরমুজ খাওয়া অনেক বেশি
উপকারে কেননা সিজারে যে ক্ষতস্থান থাকে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এর
প্রয়োজন ভিটামিন সি এর কারণে ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্য করে এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে তাই প্রত্যেক সিজারের মাদের জন্য পরিমাণ মতো
আঙ্গুর ও তরমুজ খাওয়া উচিত ।
মসুরের ডাল
আমাদের সবার পরিচিত মুশুরের ডাল যেটাতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে প্রোটিন , ফাইবার
এবং খনিজ । মসুরের ডালে এই উপরে উপাদান গুলো প্রচুর পরিমাণে থাকে এবং শরীরের
শক্তি যোগাতে অতিরিক্ত চর্বি এড়াতে সাহায্য করে তাই তাই সিজার অপারেশনের পর
মায়েদেরকে সঠিক পরিমাণে মুসরের ডাল খাওয়া উচিত। আর মসুরের ডাল সচরাচর সব
জায়গাতে পাওয়া যায় । তাই আমাদের দ্রুততম সুস্থতার জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে চার
থেকে পাঁচ দিন মসুরের ডাল খাওয়া উচিত ।
কমলা
কমলা খাওয়া সিজারিয়ান মায়েদের জন্য খুব উপকারী তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে
তারা অবশ্যই পরিমাণ মতো কমলা খাবেন। কমলা তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এর
জন্য যেসব মেয়েরা বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জন্য কমলা অনেক বেশি উপকারী ফল।
সবুজ শাক খাওয়া
সিজারের পর অনেক মায়েদের ওজন বৃদ্ধি হয় এই ওজন কমাতে তাদের সবুজ শাক সবজি
খাওয়া উচিত । কেননা সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ , সি এবং
ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়াও সবুজ শাকসবজির ভেতরে ব্রকলি পালং শাক মটরশুটি এগুলো
সিজারিয়ান মায়েদের খাবার তালিকায় রাখা যায় ।
লাল গমের রুটি
লাল গমে রুটি বলতে যেগুলোর আটা লালটি কালারের হয়ে থাকে এই সমস্ত আটার প্রচুর
পরিমাণে ফাইবার এবং আয়রন থাকে কিন্তু সাদা আটাতে সে পরিমাণে আয়রন বা ফাইবার
থাকে না। তাই সিজারিয়ান মাদের জন্য লাল গমের আটা তৈরি রুটি খুব বেশি উপকারী। তাই
প্রত্যেকদিন খাবারের তালিকায় মায়েরা রুটি রাখতে পারেন।
দেশি মুরগির ডিম
মুরগির ডিম একটা আদর্শ খাবার কিন্তু সেটা যদি দেশি মুরগির ডিম হয় তাহলে
সিজারিয়ান মাদের জন্য আরো ভালো । কেননা দেশি মুরগির ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন
পাওয়া যায় যা দেহের অনেক শক্তি জগাই। তাই সিজারের ৪০ দিন পর্যন্ত আমাদেরকে দেশি
মুরগি ডিম খাওয়ানোর যায়। আবার যদি আপনি দেশি মুরগির ডিম না পান সেক্ষেত্রে লাল
ডিম বা সাদা ডিম পোল্টি মুরগির খাওয়াতে পারেন।
হলুদ গুঁড়া
হলুদ আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী একটি উপাদান। তাই সিজারের পরে শরীরের
ফোলাভাব ও ক্ষত কমাতে হলুদ অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে । এছাড়াও
যারা প্রত্যেকদিন রাতে দুধের সাথে হালকা করে ও হলুদের গোড়া মিশিয়ে খেলেও অনেক
বেশি উপকার পাওয়া যায়। ভাই সিজারে পর মায়েরা চাইলে এ হলুদ গুড়া খেয়ে দেখতে
পারেন।
মেথির বীজ ব্যবহার
মেথি অনেক বেশি উপকারে একটি উপাদান। মাংসপেশির ব্যথা এছাড়া অন্যান্য কাজে মেথির
বীজ বা মেথির গাছ বাটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই সিজারের পর কোমর ও পিঠে ব্যথা
হলে আপনার খাবারের তালিকায় মেথির বীজ যোগ করতে অনেকে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
আদা ব্যবহার
আমাদের সকলের পরিচিত আরেকটি খাবারের উপাদান হলো আদা । আধা মানব শরীরের জন্য অনেক
বেশি উপকারী একটি উপাদান । প্রতিদিন খাবারের তৈরিতে আমরা আদার ব্যবহার করে থাকি।
আদা রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই , পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম
,অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এই ভিটামিন গুলো মানব শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
নিয়মিত পানি পান
একজন সিজারিয়ান মায়ের বৃদ্ধকালীন সময়ে ডি হাইড্রেশনের ঝুঁকি হতে পারে তাই
সিজারের পর প্রত্যেক মায়ের উচিত প্রত্যেক দিন অন্তত 8 থেকে 10 গ্লাস পানি খাওয়া
উচিত। এছাড়াও পানি পান করলে যেসব মায়েদের গ্যাসের ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে
সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে।
তরল জাতীয় খাবার
সিজারিয়ান মাদের যখন খাবার প্রস্তুত করতে হবে সেটা যেন তরল কিছু হয়। তরল
খাবারের ফলে একদিকে মায়ের যেমন শরীরের পানি শূন্যতা পূরণ হয় এবং অপরদিকে
সিজারিয়ান ক্ষত থেকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে পারবে এছাড়াও মায়ের বুকের দুধ
উৎপাদনে তরল জাতীয় খাবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
ফলমূল এবং শাকসবজি
আগেই বলেছি ফলমূল এবং শাকসবজি সিজারের পর মায়েদেরকে প্রচুর পরিমাণে খাওয়াতে
কেননা শাকসবজিতে রোগীর শরীরে অ্যান্টি বডি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং শরীরে
সার্বিক পর্যায়ে ভিটামিন সরবরাহ করে থাকে শাকসবজি থেকে এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফল
খেতে পারে পরিমাণ মতো।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
অনেক মায়েদের সিজার করার সময় অনেক রক্তপাত হয়ে থাকে । এবং মাদের শরীর দুর্বল
হয়ে পড়ে । তাই সিজারের পরে রোগীকে আয়রন সম্পৃক্ত খাবার গুলো খাওয়াতে হবে ।
মনে রাখবেন যত তাড়াতাড়ি আয়রন খাবার রোগী খেতে পারবে তত তাড়াতাড়ি রোগীর শরীরে
রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করবে ।
দুধ ডিম জাতীয় খাবার
সিজারের পর রোগীকে দুধ ও ডিম জাতীয় খাবার গুলো প্রতিদিন খাবার তালিকায় রাখতে
হবে এতে করে রোগী প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম ঘাটতি দূর হবে । তাই মনে
রাখবেন সিজারের পরে দুধ ডিম জাতীয় খাবার গুলো রোগীর খাবার তালিকায় রাখতে ।
সিজারের পর খাবারের তালিকায় যা রাখা ঠিক নয়
একজন মায়ের সিজারের পর সব খাবার তার খাবার তালিকায় রাখায় অনেক ধরনের সমস্যা
হতে পারে তাই একজন সিজারিয়ান মাকে অবশ্যই খাবারের দিক মনোযোগ রাখতে হবে ।
সিজারের পরে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে ।
সিজারের পর একজন মায়ের ওজন সাবেক ভাবে বৃদ্ধি পায় ফলে সিজারে পরবর্তী সময়ে
খাবারের ডায়েট চাট রেখে খাবার খেলে সে ওজন কমাতে পারে । চলুন তাহলে কোন
খাবারগুলো খেলে আপনার সমস্যা হবে সেগুলো দেখা যাক ।
- যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা প্রথম ৪০ দিন ফুলকপি বাঁধাকপি ব্রকলি ও পেঁয়াজ মত যে সব খাবারে গ্যাস সৃষ্টি করে সেগুলো খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে ।
- কার্বনেট পানীয় খাবার গ্রহণ থেকে দূরে থাকুন এতে করে আপনার শরীরে অনেক সমস্যা হতে পারে ।
- ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বা কোমল পানি বা ঠান্ডা খাবার থেকে বিরত থাকুন এগুলো খেলে আপনাকে ঠান্ডা লাগার পাশাপাশি আপনার বাচ্চাকে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে ।
- সিজার হওয়ার পর কয়েক মাস ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন এগুলো খেলে আপনার হজম হতে সমস্যা হবে এছাড়াও বাচ্চা বুকের দুধ পান করলে তার পেটের জ্বালাপোড়া বাড়তে পারে ।
- সিজার হওয়ার তিন থেকে চার দিন ঘি জাতীয় খাবার ও শক্ত ভাত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
- সিজারিয়ান মাদেরকে তিন বেলা নিয়মিত খাবার গ্রহণ করুন এবং প্রত্যেক খাবার গ্রহণের পর যদি ক্ষুধা লেগে তাহলে ফল বা বাদাম খেতে পারেন ।
- অতিরিক্ত ঝাল মসলা যুক্ত খাবার গুলো সিজারিয়ান মাদের এড়িয়ে চলতে হবে । কেননা এই খাবারগুলো খেলে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে ।
- সিজারের পর চা এবং কফি খাওয়া পরিমাণ কমাতে হবে । চা কফি খাওয়ার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
সিজারের পর কত দিন বেল্ট ব্যবহার করতে হয়
সিজারের পরবর্তী সময় মাজায় বেল্ট ব্যবহার নিয়ে অনেকেই নানান ধরনের প্রশ্ন মনে
জাগে তবে সিজারের পরবর্তী সময় বেল্ট ব্যবহার করলে তার উপকার পাওয়া যায়। গাইনি
ডাক্তাররা সিজারিয়ান মহিলাদেরকে বেল্ট ব্যবহার করার পরামর্শে এজন্য দিয়ে থাকেন
যাতে করে রোগীর অপারেশনের পর পেটের মেদ পরিমান কমিয়ে নিয়ে এসে আগের পর্যায়ে
ফিরে যাওয়ার জন্য।
আবার ক্ষতস্থানে যেন বেশি চাপ না পড়ে সেক্ষেত্রেও বেল্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
তবে বেল্ট ব্যবহার নিয়ে অনেক সময় মতভেদ দেখা দেয় তবে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী এই বেল্ট ব্যবহার করতে পারেন । সাধারণত ব্যবহারের সময়কাল এক থেকে দুই
সপ্তাহ বা কোন কোন ক্ষেত্রে একমাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পরামর্শ দিতে পারে ।
সিজারের পর কতদিন বিল্ডিং হয়?
একজন সিজারিয়ান মায়ের সিজার হওয়ার পর এক একজনের এক এক রকম ভাবে ব্লিডিং হয়ে
থাকে । আবার অনেক মায়েদের সিজারের পরে প্রসাবের রাস্তা দিয়ে তরল পদার্থ জাতীয়
ও গন্ধ জাতীয় বের হতে পারে । এবং একজন সিজারিয়ান মায়ের এক থেকে দুই মাস সাদা
স্রাবের সাথে ব্লিডিং আসতে পারে । তবে ব্লিডিং এর মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই একজন
গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে ।
সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে
সিজার হওয়ার পর একজন মায়ের অনেক ব্যথা অনুভব করে । ব্যথা হওয়ার জন্য ডক্টররা
অনেক মেডিসিন সাজেস্ট করে থাকেন সেগুলো খেলে ব্যথা সেরে যায় । তবে স্বাভাবিকভাবে
সিজারের পর সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত ব্যথা থাকতে পারে । যদি কারো ওষুধ সেবন করার
পরেও এ ব্যথা ১০ দিন পার হয়ে যায় বা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যথা বেড়ে যায় তাহলে
অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয় উচিত।
সিজারের পরে ইনফেকশন কেন হয়?
সিজারে পরে অনেক মায়েদের ক্ষতস্থানে ইনফেকশন দেখা দেয় তবে এই ইনফেকশনগুলো
আমাদের কিছু অসচেতনতার কাজে ফলে আসে তাই সিজারিয়ান মাদেরকে যারা দেখাশোনা করবেন
তারা অবশ্যই সতর্কতার সাথে তাদেরকে দেখাশোনা করতে হবে ।
যদি অপরিষ্কার হাতে সিজারিয়ান রোগীকে তার ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে তখন তাতে করে
জীবাণু ঢুকে ইনফেকশন হওয়ার চান্স বেশি থাকে । তাই যারা সিজারিয়ান রোগীকে
দেখাশোনা করবেন অবশ্যই তারা ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তার সাথে কাজ করবেন ।
এবং সিজারের রোগী যে ঘরে রাখা হবে অবশেষে ঘরটি প্রতিদিন ডেটল পানি দিয়ে পরিষ্কার
করুন ।
এছাড়াও অনেক মায়েরা সিজারের পর বেশি মাত্রায় মিষ্টি খেয়ে থাকেন তাহলে তাদের
কাটা জায়গায় ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । তাই সিজারের ক্ষতস্থান
শুকানোর আগে কোন মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয় ।
সিজারের পর ইনফেকশন এর লক্ষণ গুলো
- জ্বর
- শরীর কাঁপুনি দেখা দেওয়া
- প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেওয়া
- তীব্র পেট ব্যথা হওয়া
- যোনিপথে রক্তক্ষরণ
- পায়ে ব্যথা হওয়া
- পা ফুলে যাওয়া
- অপারেশনের জায়গায় ব্যথা হওয়া, পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া।
সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়
সিজারের পর যদি কোন রোগের ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে কয়েকটি বিষয়ে
লক্ষ্য রাখতে হবে । বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দিন দিন সিজারে সংখ্যা
বৃদ্ধি পাচ্ছে । এর জন্য প্রতিবছর অনেক মা ইনফেকশন হয়ে মারা যাচ্ছেন । তাই সে
সিজারিয়ান মা দের ইনফেকশন হলে যা করণীয় তা নিচে দেওয়া হলঃ
- যদি কোন রোগের সিজার করার পর তার ক্ষতস্থান ইনফেকশন দেখা দেয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে । এবং ক্ষতস্থানে প্রত্যেকদিন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিষ্কার করতে হবে ।
- সিজার করার পর যদি ক্ষতস্থান স্বাভাবিক না শুকায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং খাবারের সাথে প্রতিদিন লেবুর রস খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে কেননা লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যেটা ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে ।
- প্রত্যেকদিন পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে । কেননা পানি খাবার ফলে সিজারিয়ান মাদের ডি হাইড্রেশন থেকে মুক্তি পাবে । তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ান ।
- সিজারের পর ক্ষতস্থান ইনফেকশন হয়ে গেলে কোন সময় অপরিষ্কার হাত দিয়ে পরিষ্কার করবেন না। কারণ হাতে থাকা জীবাণু সে ক্ষতস্থানে গিয়ে ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে পুনরায় ।
- যেসব মায়েদের সিজার হয়েছে তারা ক্ষতস্থানে সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন । কেননা সাবান ব্যবহার করা ফলে জীবাণু সংক্রমণ সে জায়গায় বেশি ঘটে । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ইনফেকশন হলে কি কি করনীয় ।
সিজারে কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়?
একজন মায়ের সিজার করার পর কমপক্ষে ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত ভারী কাজ করা চেয়ে
না করা অনেক উত্তম । কেননা সিজারের জন্য একজন মায়ের অনেক বড় ক্ষত সৃষ্টি হয় ।
ফলে এই ক্ষত সৃষ্টি সারতে অনেক সময় লেগে যায় । তাই ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত
ভারী কাজ না করাই উত্তম । যদি কেউ দুই থেকে তিন মাস পর ভারী কাজ করতে চায় তাহলে
বা পরবর্তী সময় দেখা যায় তাদের এই ক্ষতস্থান থেকে ব্যথা অনুভব করছে । তাই পার্থ
পক্ষে ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত ভারী কাজ করা যাবে না । এছাড়াও আপনারা একজন
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিয়ে থাকতে পারেন ।
সাধারণ প্রশ্ন(FAQ)
প্রশ্নঃ সিজারের পর কতদিন ব্যথা থাকে?
উত্তরঃ সিজারের পর একজন মায়ের স্বাভাবিক হতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে
। আবার অনেক ক্ষেত্রে অনেক মায়েদের সময় লাগতে পারে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী থাকুন তাহলে আপনার সুস্থতা তাড়াতাড়ি আশা করা যায়।
প্রশ্নঃ সিজারের কত দিন পর সেলাই কাটা হয়?
উত্তরঃ সিজারের সেলাই টা পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে কাটা হয়ে থাকে । তবে
পরিস্থিতি অনুযায়ী ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেটা বেশিও থাকতে পারে ।
প্রশ্নঃ সিজারে পর কতদিন পর্যন্ত ভারী কাজ করা যায় না?
উত্তরঃ সিজারের পর কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ মাস পর্যন্ত ভারী কাজ করা যায় না।
প্রশ্নঃসিজারে পর কতদিন পিরিয়ড হয়?
উত্তরঃ সিজারের পর পিরিয়ড হতে এক থেকে দুই মাস লাগতে পারে কারো কারো ক্ষেত্রে
অনেকদিন সময় লাগে ।
প্রশ্নঃ সিজারের কতদিন পর জার্নি করা সম্ভব?
উত্তরঃ একজন মায়ের সিজার হওয়ার পর কমপক্ষে দেড় মাস পূর্ণ বিশ্রাম নেয়া উচিত ।
কেননা সিজার হচ্ছে একটি বড় অপারেশন একজন মায়ের পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে
।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা একজন সিজারিয়ান মায়ের কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে এবং
সিজারিয়ান মায়ের খাবারের তালিকা সহ তার ইনফেকশন এছাড়াও কোন খাবারগুলো এড়িয়ে
চললে একজন মা সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ।
আজকেরে পোস্টে আপনার ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন । এরকম আরো
অন্যান্য তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন সবাই ভালো থাকবেন
ধন্যবাদ ।
NETEINFO ওয়েবসাইটে এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন কেননা প্রতি কমেন্টের রিভিউ করা হয়
comment url