ভাতের ফ্যান খাওয়ার উপকারিতা - ভাতের মাড়
আজকের পোস্টটিতে আলোচনা করা হবে ভাতের ফ্যান সম্পর্কে । আজকের পোস্টটি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন এ ভাতের ফ্যান আমাদের শরীরের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার । আমরা অনেকেই ভাতের ফ্যান ফেলে দিই অপ্রয়োজনীয় মনে করে ।
পোস্ট সূচিপত্রকিন্তু অনেকে জানেন না।ভাতের ফ্যান আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী । চলুন তাহলে আজকে আমরা ভাতের ফ্যানের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন ।
ভাতের ফ্যানের উপকারিতা
ভাতের ফ্যানে এমন এক উপকারী পদার্থ আছে যেটা আপনি যদি রোজ পান করেন তাহলে আপনি যদি রোগা হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সেটা উপকারী। কেননা ভাতের ফ্যানে যে পরিমাণ উপকারিতা হবেন সেটা হচ্ছে আপনি আস্তে আস্তে মোটা হয়ে যাবেন মানে আপনার শরীরকে মোটা করে দিবে । ভাতের ফ্যানের অনেক বেশি পুষ্টিগুণ উপকারিতা রয়েছে যার ফলে যারা দুর্বল তাদেরকে ভাতের ফ্যান খাওয়ালে তাদের আস্তে আস্তে সবল করে তোলে এছাড়াও অনেকের স্কিনে কালো দাগ দেখা যায় এ কালো দাগ দূর করতে ভাতের ফ্যানের কোন তুলনা হয় না ।
এছাড়াও ভাতের ফ্যান খাওয়ার ফলে আমাদের যাদের রক্তে কোলেস্টরে পরিমাণ কম রয়েছে সেটা বাড়তি করতে ভাতের ফ্যান অনেক বেশি উপকারী । শুধু তাই নয় আপনার রক্তে পরিমান যখন কোলেস্টের পরিমাণ বেশি হবে তখন আপনি রোগা থেকে আস্তে আস্তে সবল হতে থাকবে । এছাড়াও ভাতের ফ্যান নিয়মিত খেলে পরিমাণ মতো তাহলে আপনার শারীরিক দিক থেকে আপনি উপকৃত হবেন ।
- অস্বস্তিকর জ্বালা ভাব চুলকানি ও র্যাশ থেকে মুক্তি পেতে আপনি গোসলের সময় ভাতের ফ্যান অল্প করে মিশিয়ে নিলে এই উপকারটি পাবেন ।
- আপনার মুখে ব্রণ হলে আপনি ভাতের ফ্যান ঠান্ডা করে তুলা দিয়ে ভিজিয়ে রেখে বরণের আক্রান্ত স্থানে দিনে দুই থেকে তিনবার লাগাবেন তাহলে আপনি এই ব্রণ থেকে মুক্তি পাবেন ।
- আমাদের অনেকের স্ক্রিনে কালো দাগ দেখা যায় কালো দাগ দূর করতে ভাতের ফ্যান ওই আক্রান্ত কালো দাগের স্থানে ব্যবহার করুন তাহলে কালো দাগ থেকে মুক্তি পাবেন ।
- ভাতের ফ্যান ত্বকের বলিরেখা থেকে মুক্ত করতে অনেক বেশি কার্যকরী ।
- আপনার চুল বৃদ্ধি করতে ভাতের ফ্যান আপনার চুলে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন এবং পরবর্তী সময়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধরে ফেলুন তাহলে দেখবেন আপনার চুল বৃদ্ধি পাবে।
- আপনাদের মধ্যে যাদের চুলের আগা ফেটে যায় তারা এই ভাতের ফ্যান দিয়ে রক্ষা করতে পারেন
- এর জন্য আপনাকে চুলের শ্যাম্পু করার পর ভাতের ফ্যান চুলের আগায় মাখিয়ে মিনিট ৩ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে বেশ কয়েকদিন করলে আপনি রোগ থেকে মুক্তি পাবেন ।
ভাতের ফ্যান খাওয়ার অপকারিতা
প্রত্যেকটা জিনিসের ভালো দিক ও খারাপ দিক থাকে তেমনি ভাতের ফ্যানের যে রকম উপকারী দিক রয়েছে তেমনি তার ক্ষতিকর দিক রয়েছে বা অপকারিতা । আপনি যেকোন খাবার যদি সেটা নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো খান তাহলে সেটা শরীরের দিক থেকে ভালো আর যদি আপনি কোন খাবার আপনার মুখে খুব স্বাদ লাগছে এই বলে যদি পরিমাণে থেকে বেশি খেয়ে থাকেন সেটা তখনই শরীরের জন্য উপকারিতা বয়ে নিয়ে আসে । এবং আপনি আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে যান । চলুন তাহলে ফ্যান খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি ।
অপকারিতা গুলো লক্ষ্য করুন নিচেঃ
- দৈনন্দিন অধিক পরিমাণে ভাতের ফ্যান খেলে আপনার ডায়রিয়ার জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
- আপনি যদি অধিক পরিমাণে ভাতের ফ্যান খান তাহলে আপনি অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাবেন ।
- ভাতের ফ্যানে যেহেতু ফাইবার থাকে সে তো অধিক পরিমাণে আপনার চর্বির বৃদ্ধি ঘটতে পারে শরীরে ।
- ভাতের ফ্যান খাওয়ার কারণে আপনার অতিরিক্ত রক্তে কোলেস্টর বেড়ে যায় ফলে ফলে আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন ।
- অতিরিক্ত বুকে চর্বি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ আপনি ভাতের ফ্যান অধিক পরিমাণে পান করেছেন ।
- ভাতের ফ্যান অধিক পারি মানে পান করলে আপনার ঘুম অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাবে ফলে আপনি আস্তে আস্তে মোটা হয়ে যাবেন ।
ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
ভাতের ফ্যান বা মাড় নিয়মিত না খেয়ে মাঝেমধ্যে খাওয়া ভালো । এক্ষেত্রে যারা অনেক রোগা তারা নিয়মিত কিছুদিন খেতে পারেন । তবে লক্ষ্য রাখতে হবে ভাতের ফ্যান কোন সময় এক গ্লাসের বেশি খাওয়া উচিত নয় । কারণ অতিরিক্ত ভাতের ফ্যান খেয়ে ফেললে আপনার ক্লান্তি বা ঘুম আসতে পারে । এছাড়াও ডায়রিয়া জনিত সমস্যায় ছোট্ট এক গ্লাস ভাতের ফ্যান খাওয়া যেতে পারে ।
কেননা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এ ভাতের ফ্যান সাহায্য করে । । এছাড়াও অতিরিক্ত গরমে ব্যায়াম করার পর শরীর অনেক সময় ডিহাইড্রেট হয়ে যেতে পারে সেই সময় শরীরের ইলেকট্রোটেলার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ভাতের ফ্যান অনেক বেশি সাহায্য করে ।
ভাতের মাড় চুলে দিলে কি হয়
ভাতের মাড় বা ফ্যান দিয়ে চুলের যত্ন নেওয়া যায় তা আমরা অনেকেই জানিনা আবার অনেকে জানি । চলুন তাহলে আমরা দেখি কিভাবে ভাতের ফ্যান দিয়ে আমাদের চুলের কি উপকার হয় নিচে সেগুলো দেওয়া হলঃ
দ্রুত চুল বৃদ্ধি করতেঃ
ভাতের ফ্যানে বা মাড় অনেক বেশি চুলের জন্য উপকারী । যাদের চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায় না তারা ভাতের ফ্যান বা মাড় ব্যবহার করে চুল বৃদ্ধি করতে পারেন । এজন্য আপনাকে প্রথমে ভেজা চুলে ভাতের ফ্যান 20 মিনিট মাখিয়ে রাখতে হবে । তারপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন তারপর ভেজস শ্যাম্পু দিয়ে চুল গুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে এভাবে আপনি মাসে কয়েকবার করে দেখুন আস্তে আস্তে আপনার চুল বৃদ্ধি পাবে ।
আমাদের মাঝে অনেকেরই চুলের আগা ফাটা একটি রোগ দেখ লক্ষ করা যায় । আপনার চুল বড় হতে না হতে আগা ফেটে যায় ফলে আপনি অনেক বিভ্রান্তির ভিতরে পড়ে যান । যাদের এই সমস্যা আছে তারা ভাতের ফ্যান বা মাড় ব্যবহার করে এই চুলের আগা ফাটা রোগ দূর করতে পারেন । এজন্য আপনাকে ভাতের ফ্যানের সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিন ।
এরপর আপনার শ্যাম্পু করা চুলে পাঁচ মিনিট রেখে দিন এরপর ভালোভাবে আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এভাবে মাসে কয়েকবার করুন দেখুন আপনার চুলের আগা ফাটা রোগ ভালো হয়ে গেছে । কেননা ভাতের ফ্যানে রয়েছে স্টার্চ এবং অ্যামিনো এসিড যা রুক্ষ শুষ্ক চুলকে নরম করে তোলে ।
চুলের উজ্জ্বলতা ও চকচকে বৃদ্ধি করতেঃ
ভাতের ফ্যান বা মাড় ব্যবহারের ফলে আপনার চুলের উজ্জ্বলতা ও চকচকে ভাব বৃদ্ধি পায় কেননা ভাতের ফ্যানে থাকা ভিটামিন বি ও ই চুলকে নরম এবং চকচকে ভাব করে ফেলতে সাহায্য করে । তাহলে বুঝতে পারছেন আপনার চুলের উজ্জ্বলতা ও চকচকে বৃদ্ধি করতে ভাতের ফ্যান মাড় অনেক বেশি উপকারী ।
মাথার ত্বকের পরিষ্কার করতেঃ
ভাতের ফ্যান বা মাড় ব্যবহার করে আপনি আপনার মাথার ত্বকের বিভিন্ন প্রকার চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা করতে পারেন । আমরা অনেক সময় অনেক পরিমাণ প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি বাড়ে ফলে তখন অস্বস্তিকর লাগে । তাই আপনি আপনার ভাতের ফ্যান দিয়ে এ মাথা ত্বকের পরিষ্কার করতে পারেন ।
ভাতের মাড়ের রূপচর্চা
আমরা অনেকেই জানি ভাতের ফ্যান দিয়ে শরীরের রূপচর্চা বা আপনার ত্বকের যত্ন নিতে পারেন কিন্তু কিভাবে এই শরীরের বা ত্বকের যত্ন নিতে হয় তা অনেকেই জানেন না । দৈনন্দিন জীবনে আমরা বাজারে থাকা অনেক প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি ফলে অনেক সময় আমাদের ত্বকের ক্ষতি সাধন হয় বা আপনি কাঙ্খিত ফলাফল হয় না । তাহলে চলুন ভাতের ফ্যান বা ভাতের মাড়ের রূপচর্চা সম্পর্কে জানি ।
জাপানে অনেক মহিলারা তাদের ত্বকের যত্নের জন্য চালের ধোয়া পানি বা ভাতের ফ্যান খুব পছন্দ করেন এবং রূপচর্চার কাজে তারা এগুলো বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকেন । তারা মনে করেন ভাতের ফ্যান ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকারী হিসেবে পরিচিত । ভাতের ফ্যান ত্বকে ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই সেটা গরম ব্যবহার করা যাবে না সেটা ঠান্ডা করে তারপর ব্যবহার করুন । আপনার ত্বকে ভালোভাবে ভাতের ফ্যান মাখিয়ে রাখুন যাতে ভাতের মাড়ের গুণাগুণ গুলো ভালোভাবে আপনার ত্বকের সাথে মিশে যেতে পারেন ।
- এছাড়াও আপনারা ভাতের মার বা ফ্যান পানির সাথে মিশিয়ে পাতলা করে নিন এবং তার সাথে গোলাপজল পরিমাণ মতো মিশিয়ে নিন এরপর আপনাদের ত্বকের ব্যবহার করুন । ফলে এটি একটি টোনার হিসেবে কাজ করবে ।
- আপনার মুখে সুন্দর রাখতে বা ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে নিতে ভাতের ফ্যান ঠান্ডা হলে দুই গালে ও মুখমন্ডলে ভালোভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মাখিয়ে রেখে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন এবং পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন । দেখবেন আপনার মুখ মন্ডল আগে থেকে অনেক বেশি ক্লিন হয়েছে ।
- ভাতের ফ্যান কে আপনি ফেস সিয়াম নিয়েও ব্যবহার করতে পারেন এর জন্য আপনাকে ভাতের ফ্যানের সঙ্গে ভালোভাবে এলোভেরা জেল মিশিয়ে এবং তার সাথে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিয়ে একটি বোতলের মধ্যে ভালোভাবে ঝাকিয়ে নিন তারপর সেটা ব্যবহার করুন ফলে আপনি কাঙ্খিত আপনার যে সমস্যার জন্য দিয়েছিলেন সেটা থেকে মুক্তি পাবেন না ।
সচরাচর প্রশ্ন ( FAQ)
প্রশ্নঃ ভাতের ফ্যান খেলে কি মোটা হয়ে যায়?
উত্তরঃ ভাতের ফ্যান খেলে মোটা হয়ে যায় তবে সেটা অনেক দিন ধরে খেলে । কেননা ভাতের খানে রক্তে কোলেস্টের বৃদ্ধি করে এবং সেই সাথে চর্বি বৃদ্ধি করে শরীরে যার ফলে আস্তে আস্তে মোটা হয়ে যায় ।
প্রশ্নঃ ভাতের ফ্যান চুলে ব্যবহার করা যায় ?
উত্তরঃ অবশ্যই আপনি ভাতের ফ্যান দিয়ে চুলের উপকারে বা চুলে ব্যবহার করতে পারবে ।
প্রশ্নঃ চুলের উজ্জ্বলতা ও চকচকে বৃদ্ধি করতে ভাতের ফ্যান ব্যবহার করা যাবে?
উত্তরঃ অবশ্যই আপনি ভাতের ফ্যান ব্যবহার করতে পারবেন । কেননা ভাতের ফ্যানে রয়েছে ভিটামিন বি এবং ই যেটা আপনার চুলকে চকচকেও নরম ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
প্রশ্ন রূপচর্চায় ভাতের ফ্যান ব্যবহার করা যায় কিনা?
উত্তরঃ রূপচর্চায় অবশ্যই আপনি ভাতের ফ্যান ব্যবহার করবেন । কেননা জাপানি মহিলারা তাদের ত্বকের যত্ন নিতে ভাতের ফ্যান খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?
প্রশ্নঃ ভাতের ফ্যান দিয়ে মাথার ত্বক পরিষ্কার করা যায় কিনা?
উত্তরঃ ভারতের ফ্যান দিয়ে মাথার ত্বক পরিষ্কার করা যায় । আপনার যদি মাথার ত্বকে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া করে সে ক্ষেত্রে আপনি ভাতের ফ্যান ব্যবহার করে উপকৃত হবেন।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করেছি ভাতের ফ্যান বা মাড় সম্পর্কে। আজকের এই পোস্টে আপনাদের ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন । আর যদি আমাদের এই পোস্টে কোন ধরনের ভুল হয়ে থাকে সেটা আমাদের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । আমরা আমাদের ভুলটি সঠিক করে নিতে পারব । সবাই ভালো থাকবেন এবং এরকম আরো অন্যান্য তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন ধন্যবাদ ।
NETEINFO ওয়েবসাইটে এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন কেননা প্রতি কমেন্টের রিভিউ করা হয়
comment url